শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
নিজস্ব সংবাদদাতা,রংপুর:
রংপুর জেলা যুবলীগের সম্মেলনের ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও হয়নি কমিটি গঠন। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন না হওয়ায় বিচ্ছিন্নভাবে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন নেতাকর্মীরা। সর্বশেষ ১৯৯৫ সালে রংপুর জেলা যুবলীগের কমিটি গঠন হয়। এর ২৭ বছর পর ২০২২ সালের ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় সম্মেলন।এদিকে সম্মেলনের দশ মাস পেরিয়ে গেলেও কমিটি না হওয়ায় চরম হতাশ রংপুর জেলার নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এরই মধ্যে বিরোধীরা দেশবিরোধী নানা কর্মকান্ড করছে। তাদের প্রতিহত করতে এখনই জেলায় কমিটি দরকার। এতে নেতাকর্মী উজ্জিবীত হবে। দলের কার্যক্রমেও গতি আসবে।দলীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৭ নভেম্বর রাশেদুন্নবী জুয়েলকে আহ্বায়ক ও মামুনুর রশিদ মামুন, লক্ষিণ চন্দ্র দাস, কামরুজ্জামান শাহিন, শেখ সাদি এবং ডা. লুৎফর আলী রনিকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৪১ সদস্যের জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। সেই সময় ৯০ দিনের মধ্যে সম্মেলন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ৫ বছর পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি।এরই মধ্যে ২০১৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিহাতীর এলেঙ্গার ভূঞাপুর সংযোগ সড়কের কাছে ট্রাক-পাজেরো সংঘর্ষে আহ্বায়ক রাশেদুন্নবী জুয়েল নিহত হন। পরবর্তী সময়ে কমিটি পুনর্বহাল করা না হলে তাদের দলীয় কার্যক্রমে ভাটা পড়ে। এরপরই ২০১৯ সালের ২৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল নির্বাচিত হয়ে রংপুর জেলা যুবলীগ কমিটি সচল করার উদ্যোগ নেন।তারই ধারাবাহিতকায় ২০২২ সালের ৫ নভেম্বর রংপুর জিলা স্কুল মাঠে রংপুর জেলা যুবলীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন উদ্বোধন করেন যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ। রংপুর জেলা যুবলীগের তৎকালীন যুগ্ম আহ্বায়ক মামুনুর রশিদের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য রমেশ চন্দ্র সেন এমপি, শাজাহান খান এমপি, কোষাধ্যক্ষ এইচএন আশিকুর রহমান এমপি, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক, সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া এবং যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর-২ (বদরগঞ্জ-তারাগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য আহসানুল হক চৌধুরী ডিউক।নেতাকর্মীরা আরোও জানান, সম্মেলনে সভাপতি পদে রংপুর কলেজের সাবেক জিএস ওয়াসিমুল বারী শিমু, জেলা যুবলীগের তৎকালীন যুগ্ম আহ্বায়ক লক্ষিণ চন্দ্র রায়, যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান মায়া, জেলা যুবলীগের সদস্য মাসুদ রানা বিপ্লব, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফখরুল হাসান লিউ, যুবলীগ জেলা কমিটির সাবেক প্রচার সম্পাদক হাসানুল কবীর তুহিনের নাম উঠে আসে। এছাড়া সাধারণ সম্পাদক পদে জেলা যুবলীগের তৎকালীন যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুজ্জামান শাহিন, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রফিকুল, যুবলীগের তৎকালীন যুগ্ম আহ্বায়ক ডা. লুৎফর আলী রনি, যুবলীগ নেতা ডিজেল আহমেদ, শহর ছাত্রলীগের সাবেক ক্রীড়া সম্পাদক মাহফুজার রহমান বুলেট, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি, সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান কানন সহ ৪০ জনের বেশি নেতা প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করেন।এর পর ওই দিন রংপুর জিলা স্কুল মাঠে সম্মেলন শেষ হওয়ার পর সভা মঞ্চ থেকে ঘোষণা দেওয়া হয় দ্বিতীয় অধিবেশন অর্থাৎ কাউন্সিল অধিবেশন নগরীর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিন সন্ধ্যা ৬টায় শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হয়। সেখানে যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, সাধারণ সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডিউক চৌধুরী এমপিসহ কেন্দ্রীয় নেতারা অংশ নেন। কাউন্সিল অধিবেশনে ১২ জন সভাপতি পদপ্রার্থীর সাক্ষাৎকার নেন নেতারা।অপরদিকে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ৪ জন একজন প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন জানিয়ে তাদের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।ফলে শেষ পর্যন্ত সভাপতি পদে ১২ জন ও সাধারণ সম্পাদক পদে ১৪ জন প্রার্থী থেকে যান। এসময় যুবলীগের চেয়ারম্যান ঘোষণা দেন, তিনি ঢাকায় ফিরে গিয়ে প্রার্থীদের জীবনবৃত্তান্ত যাচাই বাছাই করে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করবেন। এরপরই কাউন্সিল অধিবেশন কোনো কমিটি ঘোষণা ছাড়াই রাত সাড়ে ৮টায় শেষ করা হয়।
এবিষয়ে জানতে জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী রফিকুল ইসলামের সাথে যোগযোগ করা হলে তিনি বলেন, যুবলীগ একটি ঐতিহ্যবাহি সংগঠন। রংপুর জেলায় দীর্ঘদিন ধরে কমিটি না থাকায় নেতাকর্মীরা ঝিমিয়ে পড়েছেন। সম্মেলন হয়েছে দশমাস পার হলো, এখন কমিটি ঘোষণা করা হয়নি। এতে তৃণমূলে হতাশা দেয়া দিয়ে বলে তিনি দাবি করে দ্রæত সময়ের মধ্যে জেলায় কমিটির ঘোষণা দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকসহ দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের প্রতি আহব্বান জানিয়েছেন।ওয়াসিমুল বারী শিমু, লক্ষিণ চন্দ্র দাস ও মাসুদ রানা বিপ্লব সহ পদপ্রত্যাশী কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, উত্তরের আট জেলার প্রাণ কেন্দ্র হচ্ছে রংপুর। অথচ এই জেলায় ক্ষমতাসীন দলের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ সংগঠন যুবলীগের কমিটি নেই দীর্ঘদিন ধরে। একারণে জেলাসহ উপজেলা, থানা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দলের কার্যক্রমে ভাটা পড়েছে। অনেক নেতাকর্মী হতাশা প্রকাশ করেছেন। তাই যত দ্রæত সম্ভব কমিটি ঘোষণার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেন।এব্যাপারে রংপুর বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিশ্বাস মুতিউর রহমান বাদশার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানিয়েছেন, রংপুর জেলায় কমিটি নিয়ে যুবলীগের চেয়ারম্যান কাজ করছেন। এ মাসেই ঘোষণা আসতে পারে। তিনি সকল নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের জন্য কাজ করারও আহন জানান।